আসসালামু আলাইকুম, মানসিক রোগী কথাটা তুললে প্রথমেই যে দৃশ্যটি মাথায় ভাসে তা হলো রাস্তাঘাটে অথবা মানসিক হাসপাতালে রোগীদের এলোপাথাড়ি চলাফেরা, চিৎকার-চেঁচামেচি, ছোটাছুটি ইত্যাদির মতো অস্বাভাবিক কাজকর্ম। কিন্তু শুধু কি এরাই মানসিক রোগী? না, এদের বাইরেও অসংখ্য মানসিক রোগী আমাদের চারপাশে রয়েছে, অথচ আমরা বুঝতে পারছি না।
আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করব মানসিক রোগীর লক্ষণ, চিকিৎসা প্রসঙ্গে। এই টপিকটি বর্তমানে জানা খুবই জরুরি, কারণ এই সমস্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
বর্তমানে মানসিক সমস্যা বেড়ে যাওয়ার এক অন্যতম কারণ হচ্ছে গ্লোবালাইজেশন। গ্লোবালাইজেশনের প্রভাবে আমরা সবকিছু ঘরের মধ্যেই পেয়ে যায়। যার ফলে, মানুষ মানুষের সংস্পর্শে খুব কম আসছে। পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। মনুষেরা একাকিত্বে ভুগছে। একারণে, মানসিকভাবে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটছে।
এছাড়া, দেখা গেছে সম্প্রতি করোনা মহামারিতে সারা বিশ্বে আইসোলেশনের ফলে মানসিকভাবে অনেকেই একাকিত্বের কারণে ভেঙে পড়েছে। করোনা মহামারিতে মানসিক রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেশি দেখা গেছে।
মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকলাপ বিঘ্নিত হলে আমাদের মন ও শরীরের ওপর যে প্রভাব পড়ে, সেটিই হলো মানসিক রোগ। আর এই মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিই হলো মানসিক রোগী।
একজন মানুষের স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনে হঠাৎ অতিমাত্রায় কোনো পরিবর্তন আসে, যার ফলে তার জীবনযাপনে মারাত্মক বিরুপ প্রভাব ফেলে তখনই আমরা বুঝতে পারি যে তিনি মানসিক রোগী।
আরও বুঝিয়ে বললে, একজন মানুষের স্বাভাবিক ন্যাচার হতে একেবারে বিপরীতমুখী আচরণ করতে শুরু করে যেটা তার ব্যক্তিত্বের সাথে মেলে না।
যারা মানসিক রোগী তাদের মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্মণ প্রকাশ পায় যেটা তার স্বাভাবিক জীবন থেকে সম্পূর্ণই উল্টো। যেমন-
একজনের মধ্যে মানসিক রোগের লক্ষ্মণ দেখতে পাওয়া মানে তিনি মানসিক রোগী সবসময় এরকমটা না ভাবাই উত্তম। কারণ মানুষের মন ক্ষণে ক্ষণে পাল্টায়। ভালো লাগা-মন্দ লাগা থাকতেই পারে। হঠাৎ করে মন খারাপ হবে, আবার কিছুক্ষণ পরে মন ভালো হয়ে যাবে এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক।
একজনকে মানসিক রোগী হিসেবে আমরা তখনই ভাববো যখন উপরের লক্ষ্মণগুলো তার মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী হবে। দিনের পর দিন যখন একজন মানুষ তাঁর জীবনের স্বাভাবিক কাজগুলো অস্বাভাবিক উপায়ে করে থাকবে। অনেকক্ষেত্রে মানসিকভাবে সমস্যা হওয়ার পাশাপাশি শারীরিকভাবেও কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
যেগুলো চেক-আপ করার পরেও বোঝা যায় না যে আসলে কেন শারীরিক সমস্যাটি দেখা দিল। আসলে এই সমস্যাটি হয়ে থাকে অনেক সময় মানসিক সমস্যার কারণে।
তাই এবিষয়ে বলতে হয়-মানসিক রোগের লক্ষ্মণ দেখা দিলেই ব্যক্তি সবসময় মানসিক রোগী নাও হতে পারে।
আমরা প্রায় সবাই জানি- বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে, এমনকি এরকম কিছু খাবারের নাম আমরা সহজেই বলে দিতে পারি। কিন্তু খাবারও যে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে এটা আমরা অনেকেই জানি না।
মানসিক রোগীর খাদ্যতালিকায় সর্বপ্রথম নজর দিতে হবে সুষম খাবারের দিকে। সুষম খাবারে সবরকমের পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।
নিয়মিত যেসব খাবার খেলে মানসিক রোগীর স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে সেগুলোর গুটি কয়েক-
উপরের এই খাবারগুলো একজন মানসিক রোগীকে খাওয়ানো উচিত। এগুলো মানসিক বিভিন্ন সমস্যা কমিয়ে ব্রেনের এক্টিভিটি বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীর এবং মন সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
মানসিক রোগের চিকিৎসা একজন রোগীর জন্য খুবই প্রয়োজন। হতে পারে সেটা কাউন্সেলিং, ওষুধ, থেরাপি ইত্যাদি। দিনশেষে প্রত্যেকের মনের সুস্থতা খুবই প্রয়োজন। কারণ মন আর শরীর মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ, শরীর খারাপ হলে মন খারাপ হয় আর মন খারাপ হলে শরীর ভালো লাগে না। তাই প্রত্যেকে মানসিক রোগী চিনুন,জানুন এবং সুস্থ থাকুন।
মানসিক রোগের ধরণ অনুযায়ী একেক রোগীর জন্য একেক রকম চিকিৎসা হয়ে থাকে। এই রোগ সাধারণত দুই প্রকার।
নিউরোসিস: মৃদু মানসিক সমস্যা যেমন বিষন্নতা, অল্পতেই রেগে যাওয়া, ইত্যাদি এ জাতীয় সমস্যাগুলোই হচ্ছে নিউরোসিস। নিউরোসিস হলে কাউন্সেলিং এবং চারপাশের লোকজনের সহায়তায় সেরে যায়। প্রয়োজনমাফিক থেরাপিও ব্যবহার করা হয়।
সাইকোসিস: এটি হলো মানসিক রোগের জটিল প্রকৃতি। যেমন- সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, হাইপারটেনশন ইত্যাদি। এ জাতীয় রোগে অনেকক্ষেত্রে আজীবন ভুগতে হয় এবং ওষুধ খেতে হয়। ডাক্তারের পরামর্শে সবসময় থাকা উচিত এ জাতীয় রোগীর।
মানসিক ব্যাধি নিয়ে আমাদের অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে এবং রয়েছে অনেক কুসংস্কারও। তাই, সময়মতো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে প্রয়োজনে হসপিটালেও ভর্তি করতে হবে।
বর্তমানে মানসিক চিকিৎসা ক্ষেত্রে ক্রমশ ভালোই উন্নতি হচ্ছে। অনেক কোয়ালিটি সম্পন্ন চিকিৎসকও রয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলো-
উপরে উল্লিখিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা সকলেই নিরাময় হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখেন। এছাড়া নিরাময় হাসপাতালে আরও অনেকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রয়েছেন যারা রোগীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন।
আপনার পরিচিত অথবা পরিবারের কেউ মানসিক রোগে আক্রান্ত বলে সন্দেহ হলে আর দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের স্বরনাপন্ন হওয়া উচিত। এক্ষেতে নিরাময় হাসপাতাল সবসময় আপনাদের পাশে থাকবে।