|

Ways to reduce stress

মানসিক চাপ কমানোর ১০টি কার্যকরী উপায়

মানসিক চাপ, বর্তমান সময়ে গুরুত্ব না দেয়া সবচেয়ে ভয়াংকর রোগগুলোর একটি। মানসিক চাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবস্থা এতোটাই ভয়াবহ হতে পারে যে, জীবননাশের চিন্তাভাবনাও করে থাকেন অনেকেই। আজ জানবো মানসিক চাপ কি, এর লক্ষণ ও মানসিক চাপ কমানোর ১০টি কার্যকরী উপায় সম্পর্কে। তবে শুরু করার আগে গবেষণায় পাওয়া কিছু তথ্য সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) গবেষণা মতে, ২০১৯ সালে প্রতি ৮ জনের মধ্যে ১ জন মানসিক রোগে ভুগছে। ২০২০ সাল থেকে কোভিড-১৯ সমস্যার কারণে এই সংখ্যাটা আরো বেড়েছে। তথ্যসূত্র: World Health Organization (WHO) 

অন্যদিকে, বাংলাদেশ মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা থেকে জানা যায় – ২০২৩ সালের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৫০% মানুষ মানসিক চাপে ভুগছে। এদের মধ্যে প্রায় ৩০% মানুষ বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, বা অন্যান্য মানসিক চাপজনিত রোগে আক্রান্ত।

শুধুই কি প্রাপ্তবয়সরাই? না এই তালিকায় রয়েছে কিশোর কিশোরীরাও। বিএমজি সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে জানা যায়, বাংলাদেশের স্কুলগামী কিশোর-কিশোরীদের ৭৩.৫ শতাংশের মাঝেই মানসিক চাপ সংক্রান্ত লক্ষণ দেখা গেছে। আর মানসিক চাপের উপসর্গ মিলেছে ৬৫% শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তথ্যসূত্র: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

দেশে মানসিক চাপের ফলাফল কিরূপ তা বুজতে বাংলাদেশের আরো এক গবেষণার দিকে লক্ষ্য করা যাক। সেখানে ২ হাজার মানুষের সাক্ষাৎকার নেয়ার পর জানা যায় এদের প্রতি ১০০ জনে ৫ জন আত্মহত্যার চিন্তা করে। এরপর এই ৫ জনের মধ্যে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করে বসে। তথ্যসূত্র: নিউজ বাংলা ২৪ 

অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ অবাক হওয়ার মতই বিষয়। অনেকের মুখেই বলতে শোনা যায় যে, অর্থ দিয়ে সকল সুখ কেনা যায়। তবে বস্তুগত সকল কিছু কেনা গেলেও মানসিক শান্তি কেনা যায় না। এটা অর্জন করতে হয়। এবারের আর্টিকেলে আমরা এই বিষয় গুলো নিয়ে বিস্তারিত জানবো। মানসিক চাপের কারণ এনালাইসিস করে মানসিক চাপ কমানোর উপায় গুলো জানার চেষ্টা করবো।

Table of Contents

মানসিক চাপ কি?

মানসিক চাপ হলো এক ধরণের মানসিক পরিস্থিতি যেখানে ব্যক্তির চাহিদা ও ক্ষমতার মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। সাধারণ অর্থে বলা যায়, আমরা যখন কোনো কাজ করতে যাই তখন সেটার পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে যখন করতে না পারি তখন মানসিকভাবে যে চাপ অনুভব করি।

মানসিক চাপের কারণে একজন ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পরে। এতে করে সে বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হয়। মানসিক চাপ একেকজনের জন্য একেক রকম হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,

একজন ব্যক্তি তার চাকরি হারানোর কারণে মানসিক চাপের শিকার হতে পারে। এক্ষেত্রে তার মধ্যে অনিদ্রা, উদ্বেগ এবং হতাশার মত অনুভূতির ছাপ লক্ষনীয় হবে।

অন্যদিকে, একজন মা তার সন্তানের অসুস্থতার কারণে মানসিক চাপের শিকার হতে পারে। এই চাপের ফলে সে নিরাশ, ভীত এবং হতাশ বোধ করতে পারে।

এক্ষেত্রে দেখা যায় একেকজনের পরিস্থিতি অনুযায়ী মানসিক চাপের লক্ষণগুলোতে ভিন্নতা দেখা দিতে পারে। তবে সবার প্রথমেই যেটা বুঝতে হবে তা হলো মানসিক চাপের কারণ। এবার সেটাই জেনে নেয়া যাক।

মানসিক চাপের কারণ

এই পর্যায়ে জানবো ঠিক কি কি কারণে একজন মানুষ মানসিক চাপে ভুগতে পারে। উল্লেখ্য যে, সকলের জন্য সবগুলো কারণ একত্রে পরিলক্ষিত হবে বিষয়টা সবসময় এরকম না। এক্ষেত্রে কারো কম-বেশি হতে পারে। সাধারণত, সকল মানসিক চাপ মূলত দুইটি কারণে হয়ে থাকে। ১) অভন্তরীন কারণ, ২) বাহ্যিক কারণ। সে কারণ গুলোর বিস্তারিত জেনে নিন।

অভন্তরীন কারণ:

  • দুশ্চিন্তা থেকে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়ে থাকে।
  • হীনমন্যতা বা নিজেকে ছোট করে দেখার জন্য হতাশা সৃষ্টি হয় যা মানসিক চাপের কারণ।
  • বিষণ্ণতা মনকে খারাপ করে ফেলে যা মানসিক চাপ বাড়ায়
  • অনান্য শারীরিক কারণ, যেমন – মাথাব্যাথা, ঘুমের সমস্যা, ক্ষুধা হ্রাস, ওজন হ্রাস/বৃদ্ধি ইত্যাদি।

বাহ্যিক কারণ:

  • পারিবারিক সম্পর্কের মন্দ অবস্থা ও কলহ
  • কর্মক্ষেত্র বা অতিরিক্ত কাজের চাপ
  • বেকারত্বের দুশ্চিন্তা
  • অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা
  • সম্পর্কে জনিত চাপ (বিচ্ছিন্ন, সম্পর্কের অবনতি, জগড়া)

মানসিক চাপের লক্ষণ

মানসিক চাপ কমানোর উপায় সম্পর্কে জানার আগে এর লক্ষণগুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে। এজন্য আমরা ৩টি মাধ্যম লক্ষ্য করতে পারি। এগুলো হলো: শারীরিক লক্ষণ, মানসিক লক্ষণ, আচরণগত লক্ষণ। একটু বিস্তারিত জানা যাক।

শারীরিক লক্ষণ: যখন মানসিক চাপ অনুভব করবেন তখন এই লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হতে পারে।

  • মাথাব্যাথা
  • মাথা ঘোরা
  • ঘুমের অসুবিধা
  • বমি বমি ভাব
  • বদহজম হওয়া
  • ওজন বেড়ে যাওয়া অথবা কমে যাওয়া
  • নিজের মধ্যে অস্বস্তিবোধ করা
  • অসুস্থতায় ভোগা

মানসিক লক্ষণ: মানসিক চাপ যখন তীব্র হয় তখন সাধারণত নিম্ম লিখিত বিষয় গুলো ঘটতে পারে।

  • উদ্বেগ
  • ভয়
  • বিরক্তি ভাব
  • অল্পতেই রাগ
  • হতাশা
  • নিঃসঙ্গতা অনুভব
  • অসহায় বোধ করা
  • অনিশ্চয়তায় ভোগা
  • সিদ্ধান্ত নেওয়ার অসুবিধা হওয়া

আচরণগত লক্ষণ: প্রায় দেখা যায়, মানসিক চাপে আক্রান্ত ব্যক্তির আচরণ এমন হয়ে থাকে।

  • ধূমপান করা
  • অ্যালকোহল বা ড্রাগ ব্যবহার
  • অতিরিক্ত খাওয়া কিংবা খাওয়া কমিয়ে দেয়া
  • রাতে ঘুম না হওয়া
  • সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা সমাজ থেকে নিজেকে আড়াল করা

তাছাড়া ব্যক্তির স্বভাব অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রেই এই লক্ষণগুলোর বাইরেও কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় কিংবা লক্ষণগুলো অল্প কিংবা বেশি পরিলক্ষিত হতে পারে।

হঠাৎ অতিরিক্ত টেনশন? মানসিক চাপ কমানোর ১০টি সহজ ও কার্যকরী উপায়

এতক্ষণ যাবৎ আমরা মানসিক চাপের কারণ ও লক্ষণ গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি, যেখান থেকে মানসিক চাপের বিষয়ে পরিষ্কার ভাবে জানা গিয়েছে। এবার এরূপ লক্ষণ যদি কারো মধ্যে থাকে কিংবা মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে কেউ যায়, সেক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমানোর উপায় সম্পর্কে জেনে মানসিক চাপ কমানোর পদক্ষেপ নেয়াটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আসুন তবে জেনে নেই দশটি কার্যকরী মানসিক চাপ কমানোর উপায় সম্পর্কে।

১) ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করা

মানসিক চাপ কমানোর জন্য একজন ব্যক্তি সুন্দর কার্পেটের উপর সেজদা/রুকুতে নামাজ পড়ছেন। এটি ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করার একটি দৃশ্য।

তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা যাকে আমরা নির্দিধায় নিজের মনের সকল কথা বলতে পারি। ধর্মের প্রতি বিশ্বাসের দিক থেকে আমরা প্রার্থনার মাধ্যমে নিজেদের সমস্যার কথা সৃষ্টিকর্তাকে জানানোর মাধ্যমে নিজের ভেতর প্রশান্তি নিয়ে আসতে পারি। যে সমস্যা গুলোর জন্য মানসিক চাপ অনুভব হচ্ছে, প্রার্থনার মাধ্যমে সেগুলো থেকে মুক্তির দোয়া করতে পারি।

নিয়মিত নামাজ পড়া, কুরআন তিলাওয়াত ও তাকদিরের উপর বিশ্বাস রাখা মুমিনকে অবশ্যই আল্লাহ সকল মানসিক শান্তি প্রদান করবেন।

এ বিষয়ে আল্লাহ সূরা আল-বাকারা : ১৫৫-১৫৬ নং আয়াতে বলেন, “আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও, যাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে, ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন’।” তাই নিশ্চয়ই আমরা হতাশায় আক্রান্ত হলে তাঁর কাছেই ফিরে যাবো।

ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বী যারা আছেন তারা নিজ নিজ ধর্মের নিয়ম মেনে পার্থনা ও ধর্ম চর্চা করবেন।

২) কিছুক্ষনের জন্য ব্রেক নিন, হাটতে বেড়িয়ে পড়ুন

মানসিক চাপ কমানোর একটি উপায় হিসেবে রাস্তায়/আউটডোরে জগিং/হাঁটার জন্য কালো স্পোর্টস শু পরা পায়ের ক্লোজ-আপ দৃশ্য

অতিরিক্ত কাজের চাপে যখন অবসাদ চলে আসে, মানসিক চাপ অনুভব হয় তখন কিছু সময়ের জন্য সকল কিছু থেকে ব্রেক নিন, এক্ষেত্রে হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে। Today.com এর তথ্য মতে, ড. মনিক টেলো বলেন – “যদি খুব বেশি চাপ অনুভব করেন তবে প্রকৃতির কাছে চলে যান।” তিনি আরো বলেন, দ্রুত হাঁটা কিংবা একটু বাইরে যাওয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহন করা দ্রুত চাপ কমাতে সক্ষম।

৩) রিলাক্সিং ব্রেথ “4-7-8” মেথড অনুসরণ করুন

মানসিক চাপ কমানোর জন্য প্রকৃতির মাঝে খোলা আকাশের নিচে চোখ বন্ধ করে রিলাক্সিং ব্রেথ/গভীর শ্বাস নিচ্ছেন একজন নারী।

৪-৭-৮ মেথড কিংবা রিলাক্সিং ব্রেথ পদ্ধতি অনুসরণ করে দ্রুত ঘুমানো ও মানসিক চাপ থেকে অল্প সময়ের মধ্যে মুক্তি পাওয়া যায়। ড. অ্যান্ড্রু ওলসন ২০১২ সালে তার বই “দ্য ওয়ান-মিনিট মেড”-এ এই পদ্ধতিটি প্রকাশ করেন।

কিভাবে করবেন?

  • আরামদায়ক অবস্থান নিন। পিঠ সোজা করে চেয়ারে বসুন বা বিছানায় শুয়ে পড়ুন।
  • এবার আপনার জিভের ডগা উপরের ঠোঁটের ঠিক পিছনে রাখুন।
  • আপনার নাক দিয়ে ৪ সেকেন্ডের জন্য গভীর শ্বাস নিন।
  • তারপর ৭ সেকেন্ডের জন্য আপনার শ্বাস ধরে রাখুন।
  • আপনার মুখ দিয়ে ৮ সেকেন্ডের জন্য ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন।
  • এই চক্রটি চারবার পুনরাবৃত্তি করুন।

৪) খাদ্যাভ্যাস ও ঘুম: এই দুটি উপাদান উপেক্ষা করলে চলবে না

মানসিক চাপ কমানো এবং ভালো ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যাভ্যাসের দৃশ্য; ছবিতে সালমন, কিউই, মুরগির মাংস এবং কাঠবাদামের মাঝে "Foods for Sleep" লেখা একটি লাইট বক্স দেখা যাচ্ছে

সুস্থ খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ঘুম মানসিক চাপ কমানোর জন্য অপরিহার্য। আমরা অনেক সময় দেখেছি, অতিরিক্ত ক্যাফেইন, প্রসেসড ফুড ও চিনি গ্রহণ মানসিক অস্থিরতা বাড়ায়।

প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ও অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করে। ঘুমের অভাবে মস্তিষ্ক ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না এবং চিন্তাভাবনার স্বচ্ছতা নষ্ট হয়।

চেষ্টা করুন প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে উঠার। ক্যাফেইন ও মোবাইল স্ক্রিন থেকে দূরে থেকে ঘুমাতে যাওয়া আপনার ঘুমের গুণমান বৃদ্ধি করবে।

৫) ডিজিটাল ডিভাইস থেকে বিরতি নিন

মানসিক চাপ কমানো এবং ডিজিটাল ডিভাইস থেকে বিরতি নেওয়ার গুরুত্ব বোঝাতে এক যুবককে মনযোগ সহকারে স্মার্টফোন/মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে।

আধুনিক সময়ে ডিজিটাল ডিভাইসে হারিয়ে যাওয়াও ডিপ্রেশনের অন্যতম কারণ। সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদ ও ভয়াবহ এলগরিদমের কারণে প্রচুর সময় নষ্ট হয়। যার ফলে নিজের কাজের প্রতি মননিবেশ নষ্ট হয় আর মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়।

লেখক ক্রিস্টিন কার্লসনের “ডোন্ট সোয়েট দ্য স্মল স্টাফ” বইয়ে এই বিষয়ে জানিয়েছেন, তার মতে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপডেট জানার জন্য ক্রমাগত ফোন চেক করা মানসিক চাপ বাড়াতে পারে। তাই তিনি জানিয়েছেন, প্রয়োজনের বাইরে ডিজিটাল ডিভাইজ Avoid করুন আর নিজেকে সময় দিন।

৬) প্রিয় মানুষদের সাথে যোগাযোগ করুন

মানসিক চাপ কমানোর একটি কার্যকরী উপায় হিসেবে দুই প্রিয় বন্ধু বা যুবক বাইরে খেলাধুলার পর হাসিমুখে হাত মিলিয়ে (ফিস্ট বাম্প) যোগাযোগ বজায় রাখছেন।

মানসিক চাপ কমানোর উপায় হিসেবে প্রিয় মানুষদের সাথে সময় কাটানো খুব কার্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেননা, বন্ধুত্ব ও পারিবারিক বন্ধন মানসিক চাপ কমায়। বিশ্বস্ত বন্ধু কিংবা আপন মানুষের সাথে সমস্যার কথা খুলে বললে ধিরে ধিরে মাথা থেকে চাপ কমে আসে, নিজেকে খুব হাল্কা অনুভুব করতে পারবেন। তাই আপনার প্রিয় মানুষদের কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরুন, তাদের শরণাপন্ন হোন।

৭) ভ্রমণে বের হওয়া

মানসিক চাপ কমানোর জন্য পার্বত্য অঞ্চলে সবুজ পাহাড়, কুয়াশা এবং লাল ছাদের কটেজসহ মন মুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্যে ভ্রমণে বের হওয়ার দৃশ্য।

মানসিক চাপ কমানোর আরেকটি ভীষণ কার্যকরী উপায় হলো ভ্রমণ করা। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকলে আমাদের মনে সতেজ থাকে, নতুন নতুন মানুষ বিষয় ও মানুষের সাথে পরিচিত হলে আমরা দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে পারি।

যারা ভ্রমণ পিপাসু মানুষ আছেন তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা থেকে মুক্ত। তাই আপনিও যদি মানসিক চাপ কমাতে চান তাহলে সারাদিনের কর্মব্যস্ততা, সাংসারিক কাজের মাঝেও কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য সময় বের করুন। যতটা সম্ভব প্রকৃতির কাছকাছি ঘুরতে যান।

৮) যোগব্যায়াম করুন

মানসিক চাপ কমানো ও মনকে শান্ত করার জন্য একজন যুবক প্রকৃতির মাঝে বসে চোখ বন্ধ করে যোগব্যায়াম বা ধ্যান করছেন।

শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা রক্ষার জন্য খুব প্রাচীন ও সর্বস্বীকৃত উপায় হলো ইয়োগা বা যোগব্যায়াম। কয়েক ধরনের যোগব্যায়াম রয়েছে। এগুলোর ভূমিকা ভিন্ন হলে তারা একত্রে আপনাকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে।

যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক রাখতে প্রানায়াম, দুশ্চিন্তা দূর করতে ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে মেডিটেশন, শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে উত্তরাসন (Standing Forward Pose) করতে পারেন। যোগব্যায়াম করার সবচেয়ে উত্তম সময় হলো সূর্যাস্তের সময়। এছাড়াও বিকালে বা সন্ধ্যায়ও এটি করা যেতে পারে।

৯) চুইংগাম চিবানো

মানসিক চাপ কমানোর উপায় হিসেবে দাঁত পরিষ্কার ও মুখের ক্লোজ-আপ দৃশ্যে একজন দাঁড়িওয়ালা পুরুষকে চুইংগাম চিবানোর জন্য মুখের মধ্যে ঢোকাতে দেখা যাচ্ছে।

আপনি কাজের মধ্যে নানানভাবে অন্যমনষ্ক হয়ে যাচ্ছেন? মাথায় বিভিন্ন দুশ্চিন্তা ভর করে? এই সমস্যা এড়ানোর একটা উপায় হলো চুইংগাম চিবানো। চুইংগাম চিবানোর সময় আমাদের মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে। ফলে কাজে অধিকতর মনোযোগ দেওয়া যায়।

বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য এটি বেশ কার্যকর। কারণ এর ফলে কোনো বিষয় সহজেই আমাদের ব্রেইনের শর্ট-টার্ম মেমোরিতে সংরক্ষিত হয়।

১০) পছন্দের কাজ গুলো করুন

মানসিক চাপ কমানো এবং আনন্দের জন্য পছন্দের কাজ গুলো করার প্রেরণা দিতে 'WHAT DO YOU WANT?' লেখা একটি নোট, চশমা এবং এক কাপ কফি।

ব্যক্তিভেদে ছোট বড় এমন অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো করলে ভেতর থেকে ভালোলাগা কাজ করে। এটা হতে পারে গান শোনা, বই পড়া, খেলাধুলা করা, মুভি দেখা, ঘুড়তে যাওয়া। যখন এই কাজগুলোর মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত রাখবেন তখন স্বাভাবিকভাবেই একটা ভালোলাগা কাজ করবে। তাই মানসিক চাপ অনুভব করলেই তাৎক্ষনিক ব্রেক নিন, এবং পছন্দের কাজ শুরু করুন।

বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক চাপ মোকাবেলার উপায়

বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক চাপকে ইংরেজিতে Stress of Teen বলা হয়। এই চাপ সৃষ্টি হতে পারে পারিবারিক কিংবা সামাজিকভাবেও। এই সময়ে মানসিক চাপ কমানোর উপায় সম্পর্কে অবগত থাকা খুব জরুরি। কেননা বয়ঃসন্ধিকালে অনেকেই দোটানা পরিস্থিতিতে ভুগে ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমাতে যেগুলো করা যেতে পারে:

  1. পরিবারের সাথে খোলামেলা আলোচনা করে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার চেষ্টা করা।
  2. এসময়ে তীব্র আবেগ কাজ করে তাই অভিভাবকদেরও সতর্ক থাকতে হবে।
  3. অসৎ সঙ্গে জড়িয়ে না পড়ার ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
  4. পড়াশোনার চাপ অতিরিক্ত হচ্ছে কি-না সে ব্যাপারে বাবা-মায়ের সতর্ক থাকতে হবে।
  5. শারীরিক পরিবর্তন ও আগ্রহের দিকে খেয়াল রেখে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

মানসিক চাপ কমানোর ব্যায়াম

মানসিক চাপ কমানোর উপায় হিসেবে ব্যায়াম সবসময়ই ভালো একটা পদ্ধতি। এটা যেমন মানসিক চাপ কমায় তেমনই শারীরিক দিক থেকেও উন্নতি সাধন করে। এবার জেনে নেয়া যাক কিছু ব্যায়াম সম্পর্কে যা মানসিক চাপ কমানোর কার্যকরী উপায় হিসেবে কাজ করবে:

  • হাঁটা
  • সাইক্লিং
  • জগিং
  • ইয়োগা
  • মেডিটেশন

তাছাড়া উপরে উল্লেখিত “রিলাক্সিং ব্রেথ” ও বেশ কার্যকর হবে।

উপসংহার

আশা করছি উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানোর উপায় সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা পেয়েছেন। মানসিক চাপ এমন একটা রোগ যা ছোট বড় সকলের মধ্যেই দেখা দিতে পারে। তাই কোনো ব্যক্তির মানসিক চাপকে অবজ্ঞা না করে সমস্যার সমাধানে কাজ করুন।

উপরে উল্লেখিত মানসিক চাপ কমানোর ১০টি কার্যকরী উপায় অনুসরণ করুন এবং যদি মানসিক চাপের মাত্রা বেড়ে যায় তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। কেননা, শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বেঁচে থাকার জন্য।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নসমূহ (FAQs)

১. মানসিক চাপ কমাতে দৈনন্দিন রুটিনে কী পরিবর্তন আনব?

দৈনন্দিন রুটিনে স্বাস্থ্যকর খাবার, ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম, প্রকৃতিতে হাঁটা এবং ডিজিটাল ডিটক্স যোগ করুন। এগুলো হরমোন ভারসাম্য রক্ষা করে এবং মনকে শান্ত রাখে, যা দীর্ঘমেয়াদী চাপ কমাতে সাহায্য করে।

২. ধর্মীয় অনুশীলন কীভাবে মানসিক চাপ কমায়?

প্রার্থনা, কুরআন পাঠ বা ধ্যানের মতো ধর্মীয় অনুশীলন মনকে শান্ত করে এবং ইতিবাচক চিন্তা বাড়ায়। গবেষণা দেখায়, এটি স্ট্রেস হরমোন কমিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে।

৩. মানসিক চাপের কারণে শারীরিক সমস্যা হলে কী করব?

প্রথমে লক্ষণগুলো যেমন মাথাব্যথা বা অনিদ্রা চিহ্নিত করুন। যোগব্যায়াম বা শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন চেষ্টা করুন; যদি না কমে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন যাতে সমস্যা বাড়তে না পারে।

৪. পরিবারের সাথে সময় কাটানো কেন মানসিক চাপ কমায়?

পরিবার বা বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো মানসিক সমর্থন দেয় এবং একাকীত্ব কমায়। এটি এন্ডোরফিন হরমোন নিঃসরণ করে, যা স্ট্রেস লেভেল কমিয়ে মেজাজ ভালো রাখে।

৫. চুইংগাম চিবানোর মতো সাধারণ উপায় কীভাবে কাজ করে?

চুইংগাম চিবানো মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহ বাড়ায় এবং স্ট্রেস হরমোন কমায়। জাপানি গবেষণা অনুসারে, এটি দ্রুত শান্তি দেয়, বিশেষ করে চাপের মুহূর্তে।

BOOK APPOINMENT