|

অ্যাংজাইটি

অ্যাংজাইটিঃ যা জানা জরুরি

স্বাগত জানাচ্ছি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্লগে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে খুব সাধারণ এবং চোখে পড়ার মতো একটি বিষয় হলো আ্যংজাইটি। আজকাল সবার মধ্যেই কম-বেশি আ্যংজাইটি লক্ষ্য করা যায়।

অনেকক্ষেত্রে আ্যংজাইটি দরকার হলেও এটি মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে তা আমাদের জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

তাই এ বিষয়ে সচেতন করতে আজকের এই ব্লগটি। আ্যংজাইটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা জানতে শেষ পর্যন্ত পড়তে পারেন।

অ্যাংজাইটি কি?

আ্যংজাইটি শব্দের বাংলা অর্থ উদ্বেগ। সাধারণভাবে বলতে গেলে, কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করা অথবা মানসিকভাবে চাপের মধ্যে থাকাকেই আ্যংজাইটি বোঝায়। আমরা মানুষেরা প্রত্যেকেই উদ্বিগ্নতার মধ্য দিয়ে যায়। যদি আ্যংজাইটি স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে, তাহলে সেটি আমাদের জন্য অপকারী নয়।

যেমন- একজন স্টুডেন্টের মধ্যে আসন্ন পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার উদ্বেগ বা আ্যংজাইটি স্বাভাবিক মাত্রায় থাকলে সে নিয়মিত পড়াশোনা করবে এবং তাতে তার ফলাফল ভালো হবে।

আবার, করোনা মহামারির কথা মাথায় রেখে কোনো ব্যক্তির মাঝে নরমাল আ্যংজাইটি থাকলে সে বাহিরে জনবহুল এলাকায় যাবে না। তাতে সে সুস্থ থাকবে।

এরকম প্রতিটা বিষয়ে স্বাভাবিক মাত্রায় আগ্রহ, চিন্তা, কৌতূহল থাকাই হলো আ্যংজাইটি বা উদ্বেগ। আ্যংজাইটি একেবারে সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকলে আমরা কোনো ধরনের কাজ করতেই আগ্রহ পাবো না।

অ্যাংজাইটির লক্ষণ

মাত্রাতিরিক্ত আ্যংজাইটি সমস্যার অসংখ্য লক্ষণ রয়েছে। যেমন- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় ভোগা, নিজেকে সবকিছুতে ছোট মনে করা, অস্থিরতা কাজ করা, কাজে মনোযোগ না আসা, নেতিবাচক চিন্তাভাবনায় মগ্ন থাকা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া ইত্যাদি।

এছাড়াও, আরও অনেকরকম শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন- বুক ধড়ফড় করা, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, মাথা ব্যাথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি।

অ্যাংজাইটি অ্যাটাক

আ্যজাইটি মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে রোগীর অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে পারে। কখনো কখনো খুবই বিপদজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে। তাদের মধ্যে একটি হলো প্যানিক আ্যটাক

আমরা জানি, প্যানিক আ্যটাকে খুব অল্প সময়ে খুব খারাপ কিছু ঘটতে পারে। আর প্যানিক আ্যটাক হয়ে থাকে অতিরিক্ত প্যানিক, চিন্তা অথবা ভয় থেকে।

আ্যংজাইটির ফলে এরকম যেকোনো মারাত্মক সমস্যা রোগীর যেকোনো সময় হতে পারে। তাই আ্যংজাইটিজনিত সমস্যায় ভুগলে সমাধানের পথ বেছে নেওয়াটা জরুরি।

অ্যাংজাইটি দূর করার উপায়

আ্যংজাইটি হলো একপ্রকার জৈবিক প্রক্রিয়া। যা কম-বেশি আমাদের সবার মধ্যেই থাকে। আমরা যেসব উপায়ে আ্যংজাইটি থেকে দূরে থাকতে পারি সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো। যেমন-

  • একাকিত্ব এড়িয়ে চলা
  • বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের লোকজনের সাথে খোলামেলা কথা বলা
  • সর্বদা হাসিখুশি ও উচ্ছল থাকা
  • নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করা
  • নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিশ্রম করা
  • মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করা
  • চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বা কাউন্সেলিং করা ইত্যাদি

অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার

আ্যংজাইটি যখন এর স্বাভাবিক মাত্রা পেরিয়ে একজন ব্যক্তির মধ্যে অতিরিক্ত মাত্রায় দেখা যাবে এবং দৈনন্দিন জীবনে অথবা কাজকর্মে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে তখন সেটাকে আ্যংজাইটি ডিসঅর্ডার বলে।

আরও সহজ করে বললে, কোনো বিষয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করাকেই আ্যংজাইটি ডিসঅর্ডার বলে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সারাদিনের খুটিনাটি বিষয়ে চিন্তা হতেই থাকে।

অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার এর লক্ষণ

নিরাময় হাসপাতালের চিকিৎসক ও সহযোগী অধ্যাপক ডা: মেখলা সরকার বলেন, আ্যংজাইটি ডিসঅর্ডারের লক্ষ্মণ বা উপসর্গ দুইভাবে দেখা দিতে পারে, যেগুলো অবলোকন করলে বোঝা যায় যে উক্ত ব্যক্তি আ্যংজাইটি ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত কি না।

মানসিকভাবে:  মানসিকভাবে যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো-

  • কোনো বিষয়ে আগে থেকেই খারাপ ঘটনা ঘটবে ভেবে আশংকা করা, যেটাকে বলা যায় নেতিবাচক চিন্তা করা
  • অতিরিক্ত পরিমাণে দুশ্চিন্তা
  • খিটখিটে মেজাজ থাকা
  • খুব অল্পতেই রেগে যাওয়া
  • রোগীর মাঝে অস্থিরতা কাজ করা
  • কাজে মনোযোগ কমে আসা ইত্যাদি

শারীরিকভাবে: আ্যংজাইটি ডিসঅর্ডারের প্রভাবে অনেকক্ষেত্রে মানসিক সমস্যার পাশাপাশি শারীরিক কিছু সমস্যাও দেখা দিতে পারে। প্রথমত এসব বিষয়ে রোগীরা মনে করে সমস্যাগুলো তাদের শারীরিক জটিলতার কারণে হয়েছে।

পরবর্তীতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় সমস্যাগুলো শারীরিক কোনো জটিলতার কারণে হয়নি। তখন বুঝতে হবে তাঁর এটি আ্যংজাইটি ডিসঅর্ডারের কারণেই হয়েছে। এক্ষেত্রে যে লক্ষ্মণগুলো প্রকাশ পায়-

  • বুক ধড়ফড় করা
  • শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা
  • বুকে ব্যাথা
  • শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাথা হওয়া
  • প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা
  • মাথা ভারী অনুভূত হওয়া
  • ঘন ঘন প্রসাব হওয়া
  • কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া
  • পাতলা পায়খানা হওয়া
  • পেটে গ্যাস অনুভূত হওয়া
  • হাত-পা কাঁপা

জেনারালাইজড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার

কোনো সাধারণ বিষয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করাই হলো জেনারালাইজড আ্যংজাইটি ডিসঅর্ডার (GAD)। যেমন ধরুন, আপনি অফিসে যাবেন এমন সময় মনে হবে যে আপনি সময়মতো গাড়ি পাবেন তো বা গাড়িতে উঠলে কোনো দূর্ঘটনা ঘটবে না তো বা সময়মতো অফিসে পৌঁছাতে পারবো তো এরকম অপ্রীতিকর চিন্তাভাবনা।

এই সমস্যাটি রোগী চাইলেও কমাতে পারে না। তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা এসেই যায় একের পর এক ছোটখাটো বিষয় নিয়ে। এছাড়াও, এধরণের রোগী কোনো প্রকার অনিশ্চয়তা মানতে পারে না।

যেমন- কেউ আপনাকে একটা কথা কয়েকদিন পরে বলবে বলে যখন জানায় তখনই আপনার মধ্যে চিন্তা বসবে কি বলবে, আমি কি কোনো দোষ করেছি, মানুষজন কি আমাকে খারাপ বলছে এধরণের চিন্তাভাবনা। অথচ বলার কথাটা ছিল খুব সাধারণ একটা বিষয়।

এধরণের সমস্যাই হলো জেনারালাইজড আ্যংজাইটি ডিসঅর্ডার। প্রতি একশ’ জনের মধ্যে তিনজন এই রোগে ভোগে। এধরণের সমস্যা হলে দ্রুত একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

অ্যাংজাইটি নিউরোসিস

আ্যংজাইটি নিউরোসিস অনেক ধরনের মানসিক সমস্যার এক সমন্বিত নাম। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে সাধারণ প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির মধ্যে ত্রুটি হলে অথবা মনের মধ্যে চাপা কোনো যন্ত্রণার জন্য। করোনা মহামারির পর থেকে নিউরোসিস আ্যংজাইটি করোনা পেশেন্টসহ তাঁর প্রিয়জনদের মধ্যে বেশি দেখা গেছে।

এরোগের কয়েকটি কারণ-

  • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা
  • নেগেটিভিটি
  • উদ্বেগ
  • অতিরিক্ত আবেগ ইত্যাদি

অ্যাংজাইটি নিউরোসিস চিকিৎসা

আ্যংজাইটি নিউরোসিসে আক্রান্ত হলে রোগী নিজেই বুঝতে পারে যে তার মনে কোনো ধরনের সমস্যা হয়েছে। উদ্বেগ বা আ্যংজাইটি কমানোর যেসব চিকিৎসা রয়েছে সেসব চিকিৎসার মাধ্যমেই আ্যংজাইটি নিউরোসিস চিকিৎসা করা হয়। কারণ আ্যংজাইটি নিউরোসিস স্বতন্ত্র কোনো রোগের নাম না, এটি আ্যংজাইটিসহ অনেক মানসিক রোগের এক সমন্বিত রুপ।

এ রোগে চিকিৎসার জন্য জরুরি মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এ রোগকে হেলাফেলা করলে ভবিষ্যতে রোগীর মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। এমনকি সাইকোসিস সমস্যা অর্থাৎ পাগলও হয়ে যেতে পারে।

ইতিকথা

আশা রাখছি যে আজকের ব্লগের মাধ্যমে অ্যাংজাইটি কি এবং এর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরতে পেরেছি।

আপনি অথবা আপনার পরিবারের কোনো সদস্য এই রোগে আক্রান্ত বলে সন্দেহ হলে অতিসত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে নিরাময় হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা আপনার স্বাস্থ্য সেবায় সর্বদা প্রস্তুত।

BOOK APPOINMENT