যত ধরনের মানসিক সমস্যা আছে তার মধ্যে শুচিবাই রোগ অন্যতম। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার বা সংক্ষেপে OCD।
এটি হলো মনের এমন একধরনের অবস্থা যেখানে এতে আক্রান্ত ব্যক্তি ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে একই কাজ, আচরণ বারবার করতে চায় (Obsession) এবং কোনো কিছু অযৌক্তিক জেনেও সেটা বারবার করে (Compulsion)।
শুচিবাই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মূলত ৪ ধরনের সমস্যায় বেশি ভুগে থাকেন। সেগুলো হলো কন্টামিনেশন ও ক্লিনিং, ডাউট ও চেকিং, অর্ডারিং, ট্যাবু। এছাড়াও আরো অনেক ধরনের ওসিডি রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায় কন্টামিনেশন ও ক্লিনিং সমস্যাটি।
এগুলো নিয়ে পরবর্তী প্যারায় আলোচনা করবো।
ওসিডি কেন হয় তা সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে বিভিন্ন মতামত দিয়ে থাকেন। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো:
এর বাইরেও ওসিডির কারণ সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানে আরো অনেক থিওরি প্রচলিত আছে।
শুচিবাই রোগ বা ওসিডি-তে আক্রান্ত হলে মূলত দুই ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। সেটা হলো অবসেশন ও কমপালশন। ওসিডি রোগের কয়েকটি লক্ষণ নিচে উল্লেখ করা হলো।
১. কন্টামিনেশন ও ক্লিনিং: রোগীদের মাঝে এটি সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। এতে ব্যক্তির সবসময় মনে হয় তার শরীরে ময়লা লেগেছে, শরীর অপবিত্র হয়ে গেছে। সে অকারণে ঘন ঘন শরীর ধোয়া, গোসল করার মতো, ব্যবহার্য জিনিসপত্র পরিষ্কারের মতো কাজ করে।
২. ডাউট ও চেকিং: এই সমস্যায় আক্রান্ত হলে ব্যক্তি কোনো কাজ করার পরে বারবার সন্দেহ করে যে কাজটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করেছে কিনা এবং তা পরীক্ষা করে। যেমন: ঘরের দরজায় তালা লাগানোর পরেও চেক করা তালা সঠিকভাবে লেগেছে কিনা।
৩. অর্ডারিং ও অ্যারেঞ্জিং: রাস্তায় হাঁটার সময় কোনো কাজের সময় বিভিন্ন বিষয়-বস্তুর সাথে কাজের মিল রেখে চলা। যেমন: হাটার সময় ল্যাম্পোস্ট, পিলার বা ছায়ার সাপেক্ষে হাটা।
৪. ট্যাবু বা বিকৃত চিন্তা: এই সমস্যা আক্রান্ত রোগী নিষিদ্ধ ও বিকৃত যৌন সম্পর্ক, দৃশ্য কল্পনা করতে থাকে যা তার ব্যক্তিত্বের সাথে একদমই মানানসই না।
চিকিৎসার মাধ্যমে শুচিবাই বা ওসিডি রোগ থেকে পুরোপুরি মুক্তি না পেলেও এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এর জন্য দুই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যাপক জনপ্রিয়।
অনেকের ক্ষেত্রে শুধু সাইকোথেরাপির মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপির পাশাপাশি ওষুধ-ও প্রয়োজন হতে পারে।
যেহেতু ওসিডি বা শুচিবাই রোগের অন্যতম কারণ বিকৃত ও অপ্রত্যাশিত যৌন চিন্তা, অন্যান্য ধারণা সেহেতু ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে এসব সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।
শুচিবাই বা ওসিডি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে। এর কারণে একজনের জীবনের বিভিন্ন সম্ভাবনাময় সুযোগ নষ্ট হতে পারে, জীবণ বিরক্তি কারণ হতে পারে।
তাই ওসিডি রোগের লক্ষণগুলো আপনার মাঝে দৃশ্যমান হলে সেটাকে অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটিকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে কথা বলতে নিরাময় হাসপাতালে যোগাযোগ করতে পারেন। আমাদের চিকিৎসকরা আপনার সেবায় প্রতিশ্রুত।
এটি যেহেতু মানসিক রোগ সেহেতু এখানে রোগীর মানসিক অবস্থার পরিবর্তন করা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। হোমিওপ্যাথি ওষুধের মাধ্যমে রোগীর মানসিক স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি করা সম্ভব। তবে সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি হচ্ছে হোমিওপ্যাথির পাশাপাশি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া।
শুচিবাই রোগের জন্য কার্যকরী অনেক ওষুধ রয়েছে। তবে সব ওষুধ সব রোগীর জন্য কার্যকরী নয়। কোন ধরনের সমস্যায় কোন ওষুধ প্রয়োজন তা কেবল সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমেই জানা সম্ভব। এজন্য হোমিও চিকিৎসার পাশাপাশি সাইকোথেরাপি-ও প্রয়োজন।
সম্ভব। তবে সেটা খুব একটা কার্যকরী নয়। সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সাইকোথেরাপি ও ওষুধ একসাথে গ্রহণ করা।
ওসিডি রোগীদের জন্য চিকিৎসকরা যেসব পরামর্শ দিয়ে থাকেন সেগুলো কয়েকটি হলো-
শুচিবাই রোগের প্রভাব ব্যক্তিজীবনে ব্যাপক হলেও সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে এ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। শারিরীক সুস্থতা অনেকাংশেই নির্ভর করে মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে।
সেজন্য কোনো রোগকে অবহেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ একটি রোগ থেকে অন্য একটি রোগের সূচনা হতে পারে।