প্রাণঘাতি যতগুলো মাদক আছে তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর একটি হলো ইয়াবা। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মতো আমাদের দেশেও এর ভয়াল উপদ্রব ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু অনেকে ইয়াবা সেবনে আসক্ত হওয়ার পরে এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বুঝতে পেরে তা থেকে পরিত্রাণ পেতে চান কিন্তু অনেকেই এর সঠিক সমাধান বা চিকিৎসা সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা থাকে না।
আপনি কি জানে যে, ইয়াবার ক্ষতিকর দিকগুলো কী কী এবং এর আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় কী? আপনি যদি ইয়াবার প্রতি আসক্ত একজন হয়ে থাকেন বা আপনার খুব কাছের কেউ এই মরন ছোবলের শিকার হয়, তাহলে আজকের লেখাটি আপনার জন্য।
ইয়াবা যে আমাদের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ, এ বিষয়ে কেউ দ্বিমত পোষণ করছে না। এর করাল গ্রাশের শিকার হতে পারে যে কেউ, এমনকি আপনিও। তাই সতর্ক থাকা চাই। অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। আজকের এই গুরুতপূর্ণ লেখায় আমরা জানানোর চেষ্টা করবো ইয়াবার আদ্যোপান্ত এবং এর আসক্তি থেকে কীভাবে মুক্ত হওয়া যায়।
অনেকের মনেই এরকম প্রশ্ন আসতেই পারে, আসলে ইয়াবা তৈরি হয় কিভাবে যার দরুন এটা আমাদেরকে এত মারাত্মকভাবে নিঃশেষ করে দেয়। ইয়াবা তৈরির বিষয়ে জানার আগে চলুন এর পেছনের ইতিহাস থেকে ঘুরে আসি।
ইয়াবার গোড়াপত্তন হয়েছিলো মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান নেতা আলবার্ট হিটলারের শাসন-আমলে। যুদ্ধকালীন সময়ে হিটলার তার সৈন্যবাহিনীকে সবসময় সজাগ রাখতে অ্যামফেটামিন (Amphetamine) দিয়ে তৈরি পারভিটিন নামক একধরনের ঔষুধের ব্যবহার শুরু করেছিলো। কিন্তু কিছু সময় পরে এটির কিছুটা পরিবর্তন করে মাদকে রূপ দিয়ে এশিয়াদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
ধারণা করা হয়, পাহাড়ি রাস্তায় ঘোড়া ভারি মালবাহী গাড়ি টানতে চাইতো না। এজন্য ঘোড়াকে শক্তিশালী এবং উত্তেজিত করার জন্য মিয়ানমারের শান প্রদেশের বাসিন্দারা ঘোড়াকে এটা খাওয়াতো। পরবর্তীতে সেটা এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমনঃ মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডের মানুষও ধীরে ধীরে ব্যবহার করতে শুরু করে। এভাবে এই ভয়াবহ মাদক আমাদের বাংলাদেশ সহ অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
ইয়াবা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমনঃ হিটলার্স ড্রাগ, সাবু, নাজি, বুলবুলিয়া, স্পীড, আইসি, চকোলি, মেথ, ক্রিস্টাল ইত্যাদি। যে নামেই ডাকুক এটা যে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর তা মিথ্যা নয়।
ইয়াবা তৈরি হয় মূলত ক্যাফেইন ও মেথ-অ্যামফেটামিনের সংমিশ্রণে। তবে বর্তমানে হাইডোক্লোরিক অ্যাসিড,সালফিউরিক অ্যাসিড, ব্যাটারির লিথিয়াম, রেড ফসফরাস, এসিটোন ইত্যাদির মতো বেশকিছু রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হয়। আর এটাকে মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য এতে আঙ্গুর, কমলা, স্ট্রোবেরি, ভ্যানিলা ফ্লেবার, লাল-সবুজ রঙ মেশানো হয়। মাঝে মাঝে এর সাথে হেরোইন মিশিয়ে নেশাকে আরো ভয়ানক অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ইয়াবা একটা জীবননাশকারী মাদক। এর প্রতি আসক্ত হয়ে মানুষ শারীরিক ও মানসিকভাবে বিকল হওয়া থেকে শুরু করে মৃত্যুর কোলে পর্যন্ত ঢোলে পড়তে পারে। তাই আমাদের সকলের উচিৎ এর ক্ষতিকর দিকগুলো সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান রেখে এটা থেকে বিরত থাকা। নিচে ইয়াবার ক্ষতিকর দিকগুলো উল্লেখ করে হলোঃ
০১. সঠিক উপায় খুঁজে পেলে যেকোনো বড় ধরনের সমস্যার সমাধান করাও সম্ভব। কেউ মাদকাসক্ত হলে সুচিকিৎসার মাধ্যমে তাকে সুস্থ করে তোলা এবং মাদকের ভয়াল থাবা থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব। এজন্য শুধু ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলেই হবে না, পাশাপাশি প্রয়োজন রোগীর প্রবল ইচ্ছাশক্তি।
মাদকাসক্ত বা ইয়াবা আসক্ত ব্যক্তিদের কয়েকটি ধাপে চিকিৎসা করা হয়, যার প্রথমটি হলো ডিটক্সিকেশন পদ্ধতি। এসময় মূলত রোগীকে একটা মাদক নিরাময় কেন্দ্রে বা পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয় এবং সেখানে তাকে মাদক সেবন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হয়। মাদকের প্রতি আসক্তি বারবার হতে পারে। একজন এটা থেকে পরিত্রাণ পেয়ে আবারও মাদকের দিকে ঝুকে যেতে পারে।
পুনর্বাসন কেন্দ্রে রোগীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ করে তোলার পাশাপাশি তার ইচ্ছাশক্তি বৃদ্ধি এবং আত্মবিশ্বাস তৈরি করার একধরনের প্রচেষ্টা করা হয়, যেটা অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি ভালো ফলাফল দেয়। এজন্য একটা ভালো পুনর্বাসন কেন্দ্র খুবই জরুরী।
আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন, ঢাকার সবচেয়ে ভালো মাদক নিরাময় কেন্দ্র বা পুনর্বাসন কেন্দ্র কোনটি? তাহলে আমি উত্তরে বলবো, নিরাময় হাসপাতাল হচ্ছে ঢাকার সবচেয়ে অত্যাআধুনিক, পরিবেশবান্ধব পুনর্বাসন কেন্দ্র। তারা একযুগের বেশি সময় ধরে দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক এবং সেবাকর্মীর মাধ্যমে বহু রোগীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
আপনি যদি চান নিজে অথবা কাছে মানুষকে মাদকের এই ভয়াবহ পরিণতি থেকে মুক্ত করতে তাহলে “নিরাময় হাসপাতাল” হতে পারে আপনার জন্য সেরা মাদক নিরাময় কেন্দ্র। তারা ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মোহাম্মদপুরে অবস্থিত, যোগাযোগ করতে এখানে ক্লিক করুন।
০২. এরপর অভিজ্ঞ চিকিৎসকের দ্বারা রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা পরীক্ষা করে সে অনুযায়ী ঔষুধ ও চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এসময় মাদক বা ইয়াবার প্রতি আসক্তির পাশাপাশি অন্যকোনো অসুখ থাকলে সেটারও যথাযথ চিকিৎসা করা হয়।
০৩. এরপর রোগীকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে দুই-তিন মাস রেখে মাদকের সাথে তার সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা করা হয়। এই সময়ের মধ্যে সে ইয়াবা বা যেকোনো মাদকের প্রতি প্রায় পুরোপুরি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলতে পারে। যার ফলে পরবর্তীতে এই ধ্বংসরূপ পথে আসার ইচ্ছে অনুভব করে না।
০৪. চিকিৎসাকালীন সময়ে রোগীকে ফ্যামিলি-থেরাপি, সাইকো-থেরাপির মতো কিছু থেরাপি দেওয়া হয়। যা চিকিৎসা-পরবর্তী সময়েও কিছুদিন পরে নেওয়া উচিৎ।
বলা হয়ে থাকে যে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। তাই কোনো সমস্যা উদ্ঘাটিত হওয়ার পরে তার প্রতিকয়ার করার চেয়ে প্রতিরোধ করাই ভালো। নিচে ইয়াবার আসক্তি প্রতিরোধে করণীয়গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
ভুলক্রমে ইয়াবা বা কোনোরকম মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়লে তা থেকে কিভাবে মুক্তি পাবেন চলুন সে সম্পর্কে জেনে নেয়।