কনভার্সন ডিসঅর্ডার যা মানসিক চাপসৃষ্ট একটি রোগ। এ রোগ এখন মানুষের অহরহ হচ্ছে। আমাদের জানার অজ্ঞতা থেকে আমরা এটাকে অনেক জটিল কিছু ভেবে থাকি। যা আরো সমস্যা বাড়ায়। এজন্য আজ আমরা জানব- কনভার্সন ডিসঅর্ডার কি, কেন হয়, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে।
হিস্টেরিয়া বা কনভার্সন ডিসঅর্ডার একটি মানসিক রোগ। যাকে বলা হয় ফাংশনাল নিউরোলজিকাল সিম্পটম ডিসঅর্ডার। আবার অনেকে এটিকে হিস্টোরিক্যাল কনভার্সন রিয়্যাকশন (এইচসিআর) নামেও ডেকে থাকে।
‘কনভার্সন’ শব্দের অর্থ হলো পরিবর্তন। এ রোগের মানসিক সমস্যাগুলো পরিবর্তিত হয়ে আমাদের খুব পরিচিত কিছু অসুখ বা লক্ষ্মণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। যেমন- খিঁচুনি, ফিট পড়া, গলা ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, কানে শুনতে না পাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে যার জন্য এটাকে অনেকে স্নায়বিক সমস্যাও ভেবে থাকে।
আসলে এটি একটি মানসিক রোগ। কনভার্সন ডিসঅর্ডারের রোগী হঠাৎ হঠাৎ অদ্ভুত কথা-বার্তা, আচরণও করে থাকে। ফলে অনেকে এটাকে জ্বিনের আছর ভেবে ভুল করে।
মানসিক চাপ মোকাবেলা করতে না পেরে মানব মনে যে উদ্বিগ্নতা সৃষ্টি হয় সেটিই হলো কনভার্সন ডিসঅর্ডার। কনভার্সন ডিসঅর্ডারকে পূর্বে হিস্টোরিয়া নামে ডাকা হতো। উপসর্গের ভিত্তিতে এটি দুই ধরনের-
কনভার্সন হিস্টোরিয়া: এ ক্ষেত্রে রোগীর শারীরিক লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। যেমন- পেট ব্যাথা, মাথা ব্যাথা ইত্যাদি।
ডিসোসিয়েটিভ হিস্টোরিয়া: এ ক্ষেত্রে রোগীর মানসিক কিংবা সেনসরি সিম্পটম প্রকাশ পায়। যেমন- ঘুমের মধ্যে হাঁটা।
চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনো কনভার্সন ডিসঅর্ডারের কোনো সঠিক কারণ জানতে পারেনি যে এটি কেন হয়। তবে, মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন এটি হয়ে থাকে রোগীর মানসিক দ্বন্দ্ব থেকে।
কোনো একটি বিষয় নিয়ে কেউ অতিরিক্ত প্রেশারে থাকলে এবং সমস্যার কথা কাউকে বলতে না পারলে ও কোনো সমাধান না করতে পারলে মনের মধ্যে যে একটা চাপ সৃষ্টি হয় সেটির কারণেই কনভার্সন ডিসঅর্ডার হয়ে থাকে।
প্রথম দিকে ভাবা হতো, হিস্টেরিয়া বা কনভার্সন ডিসঅর্ডার নারীর জরায়ুর অস্বাভাবিকতার কারণে সৃষ্ট রোগ, যার কারণে শুধু মেয়েদেরই হয়। পরবর্তীতে মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড পরিস্কার করেন যে এটি একটি মানসিক রোগ এবং এটি ছেলে-মেয়ে উভয়েরই হয়ে থাকে।
শিশু থেকে বয়স্ক সব বয়সের মানুষেরই হয় তবে ১৮-২১ বছর নারীদের তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। কনভার্সন ডিসঅর্ডারের বেশ কিছু কারণ হলো-
অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্ব: কনভার্সন ডিসঅর্ডার মূলত হয়ে থাকে ব্যক্তির মধ্যে জমিয়ে রাখা চিন্তা-ভাবনা থেকে। অন্তর্মূখী স্বভাবের মানুষ সহজে নিজের মনের কথা অন্যের কাছে প্রকাশ করে না।
তারা নিজেদের মধ্যে জমিয়ে রাখে যেটা একপর্যায়ে তাদেরকে মানসিকভাবে প্রভাবিত করে। এজন্য এ রোগটি অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্বের লোকজনের বেশি হয়ে থাকে।
পারিপার্শ্বিক অবস্থা: আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা আমাদের মনে প্রভাব ফেলে। সাধারণত ট্রমাটিক পরিস্থিতি, মানসিক অবসাদ, ভয়, দুশ্চিন্তা, মৃত্যুশোক কিংবা প্রেমে প্রত্যাখান ইত্যাদি বিষয়গুলো আমাদের ব্রেনে চাপ ফেলে যা কনভার্সন ডিসঅর্ডার হওয়ার অন্যতম উৎস।
মানসিক দ্বন্দ্ব: আমাদের মন খুবই সেনসেটিভ। পারিপার্শ্বিক চাপে মনে কোনো দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে এবং সেই দ্বন্দ্ব থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে কনভার্সন ডিসঅর্ডারের সৃষ্টি হয়।
বংশগতির ধারা: পারিবারিক সূত্রে বাবা -মা, দাদা-দাদি কিংবা পরিবারের কারোর মাঝে এ রোগ থাকলে এটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কনভার্সন ডিসঅর্ডারের লক্ষ্মণ একেক ব্যক্তির একেক রকম হয়ে থাকে। যদিও এটি একটি মানসিক রোগ, তবুও এ রোগের লক্ষ্মণগুলো সাধারণত স্নায়বিক বা শারীরিক হয়ে থাকে। এ রোগের লক্ষ্মণগুলোকে মোটা দাগে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
Motor Symptom: খিঁচুনি হওয়া, হঠাৎ হঠাৎ ফিট পড়া, শরীরের যেকোনো অংশ অবশ হওয়া বা প্যারালাইসিস হওয়া, ঢোক গিলতে সমস্যা হওয়া, মুখ দিয়ে কথা বের না হওয়া, হাত-পা কাঁপাকাপি, মাংসপেশি সংকুচিত হওয়া, শরীর দূর্বল হওয়া, হাঁটতে সমস্যা হওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া ইত্যাদি।
Sensory Symptoms: চোখে দেখতে না পাওয়া কিংবা কোনো কিছু অস্পষ্ট বা ডাবল দেখা, কানে শুনতে না পাওয়া, স্পর্শ অনুভূত না হওয়া ইত্যাদি।
কনভার্সন ডিসঅর্ডার যেহুেতু এটি একটি মানসিক রোগ, তাই এ রোগের চিকিৎসা হিসেবে রোগীর মনের অবস্থা দিকে মনোযোগ দিতে হবে। অনেকক্ষেত্রে, এ রোগের লক্ষ্মণ যেহেতু শারীরিক, ডাক্তারের কাছে যেয়ে হাজার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেও কোনো রোগ ধরা পড়ে না।
তখন হয়তো বাড়ির লোক রোগীকে ভুল বুঝতে পারে যে তার আসলে কিছুই হয়নি। এগুলো বলে রোগীর মনে আরও চাপ সৃষ্টি হতে পারে। আসলে তার সমস্যা আছে এবং সেটা মানসিক।
কনভার্সন ডিসঅর্ডার এর চিকিৎসার অন্যতম উপায় হচ্ছে রোগের লক্ষ্মণগুলোকে অনেক বড় রোগ ভেবে গুরুত্ব না দেওয়া এবং রোগীকে স্বাভাবিক জীবনযাপনের কাজের দিকে উৎসাহিত করা। রোগীকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেওয়া। রোগীকে এটা ভাবানো যাবে না যে তার বড় রোগ হয়েছে।
অনেকেই ভাবে যে এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। আসলে এ রোগের চিকিৎসা আছে এবং রোগের উপসর্গের শুরুর দিকেই যদি একজন সাইক্রিয়েটিস্টের দ্বারস্থ হওয়া যায় এবং তিনি যে ওষুধ দিবেন সেগুলো নিয়মিত খাওয়া ও পরবর্তী নির্দেশনা মেনে চললে তাহলে এ রোগ থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। এ রোগের দুটি চিকিৎসা হলো-
কনভার্সন ডিসঅর্ডার তেমন কোনো জটিল রোগ না। ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ ও পরামর্শ মেনে চললে এবং পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
তবে, অনেকক্ষেত্রে যদি বেশি সমস্যা হয় তখন মানসিক হাসপাতালে যেয়ে উন্নত চিকিৎসা নেওয়া উচিত। আমাদের দেশে অনেক ভালো মানের মানসিক হাসপাতাল রয়েছে যেগুলো উন্নত চিকিৎসা দিচ্ছে।
তবে এ সকল হাসপাতালের মধ্যে Niramoy Hospital অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান। যেটি সনামধন্য চিকিৎসকদের মাধ্যমে সফলভাবে মানসিক রোগ ও ড্রাগস জনিত সমস্যা থেকে সমাধানের পথ দেখাচ্ছে।
আপনারা যারা কনভার্সন ডিসঅর্ডারসহ অন্যান্য মানসিক রোগে ভুগছেন তারা Niramoy Hospital এ যেতে পারেন। বিস্তারিত জানতে হসপিটালের এই ওয়েবসাইটটিতে ঘুরে আসুন।