|

Drug-Addiction-

মাদকাসক্তির কারণ ও প্রতিকার

সারা পৃথিবীতে তরুন প্রজন্মের জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলো নিয়ে একটি তালিকা বানাতে গেলে মাদকাসক্তি বোধ হয় সবার উপরের দিকেই থাকবে। মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব এত বেশি যে জাতিসংঘ ১৯৯১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত পুরো একটি দশককে মাদক বিরোধী দশক হিসাবে ঘোষনা করে। ২৬ জুনকে ঘোষনা করে মাদক বিরোধী দিবস হিসেবে। তাহলে খারাপ জেনেও মানুষ কেন মাদক গ্রহন করে? কেন একবার ছেড়ে দেওয়ার পরও মানুষ আবার মাদকে আসক্ত হয়ে যায়? আপনার অতি প্রিয় কেউ মাদকাসক্ত হলে কীভাবে তাকে এই মরণ ছোবল থেকে মুক্তি করবেন? আসলে মাদকাসক্তির কারণ কী? চলুন জেনে নেই।

মাদকাসক্তি কি?

খুব সহজ ভাষায় বলতে গেলে, মাদক গ্রহনের প্রতি যে নির্ভর্শীলতা ও প্রবণতা তাকেই মাদকাসক্তি বলা যায়। বর্তমানে গবেষকরা মাদকাসক্তিকে ব্রেনের ডিসওর্ডার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। একটি রোগের যখন সুনির্দিষ্ট লক্ষন থাকে না কিংবা রোগ প্রমাণের মত যথেষ্ট তথ্য থাকে না, তখন তাকে ডিসওর্ডার বলা হয়।

একে ডিসওর্ডার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, কারণ মাদক মস্তিষ্কের চিন্তা প্রক্রিয়া, ডোপামিন নিঃসরণের মাধ্যমে ভালো লাগা, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার জন্য পরিবর্তন ঘটায়। দীর্ঘদিন এই পরিবর্তন চলতে থাকলে মানুষের মারা যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।

মাদক থেকে অনেকদিন দূরে থাকলেও, এই পরিবর্তন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে খুব কম। তাই নিরাময় কেন্দ্রে গিয়ে মাদক থেকে মুক্তি পেলেও আবার মাদকাসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে ভালো চিকিৎসার মাধ্যমে মাদকাসক্তি নির্মুল করা সম্ভব। ঢাকার মধ্যে সেরা মাদক নিরাময় কেন্দ্রের কথা বলতে গেলে প্রথমেই মনে পড়ে “নিরাময় হাসপাতালের” নাম। তারা বেশ সফলতার সাথে দশ বছরের বেশি সময় ধরে এই ফিল্ডে কাজ করে আসছে।

মাদকাসক্তির কারণ

অসংখ্য কারণে একজন মানুষ মাদকের প্রতি আসক্ত হতে পারে। মাদক সেবনের ফলে মানুষের মাঝে এক ধরনের ভালো লাগা তৈরি হয়। শক্তি, আত্মবিশ্বাস, সাহস বাড়িয়ে দিতে পারে কোকেনের মতো মাদক। হেরোইনের প্রভাবে প্রশান্তি আর তৃপ্তির অনুভূতি জন্মায়।

ডিপ্রেশন, মানসিক চাপ, বিষন্নতা ইত্যাদি কমাতেও মাদক সাময়িক সময়ের জন্য কাজে দেয়। মাদকাসক্তের বড় অংশ মানসিক চাপে পড়ে মাদক গ্রহণ শুরু করে। আর এভাবেই হাজার হাজার কিশোর কিশোরী সহ নানা বয়সের মানুষ আটকে পরে মাদকের দূর্ভেদ্য জালে।

কিছু কিছু মাদক মনোসংযোগ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। স্কুল কলেজের ছাত্ররা এসব মাদক গ্রহন করে বেশি। তবে মাদক নিতে নিতে এক সময় দেখা যায় মাদক ছাড়া আর কাজে মন দিতেই পারছে না।

কৈশোরকালে মাদক ছড়ায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণে। এই সময়টা জীবনের একটা উত্তরকালীন পর্যায়, এই সময়ে মনের মধ্যে নানারকম দুশ্চিন্তা ও হতাশা বাসা বাধে। এ সময় বন্ধু বান্ধবের চাপে ও প্রলভনে পড়ে অনেকে মাদক নেওয়া শুরু করে। মাদক প্রথম প্রথম খুব একটা আসক্তি তৈরি করে না। বেশিরভাগ মানুষ নিজেদের নিয়ন্ত্রনে রাখতে সক্ষম হবে এই বিশ্বাসে মাদক নেয়। আর নিজের অজান্তেই মাদকের ওপর তাদের নির্ভশীলতা তৈরী হয়।

২০০৭ সালে নিউ ইউর্কের গবেষক, ফাওলার মাদকাসক্তের মস্তিষ্কের ইমেজ বা ছবি তৈরীর কাজ করেন। এতে দেখা যায় মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের স্মৃতিকেন্দ্র, সিদ্ধান্ত নেওয়ার অংশ, আচার-ব্যবহার নিয়ন্ত্রনের অংশবিশেষ স্বাভাবিক মানুষ থেকে বেশ আলাদা হয়। যুগান্তকারী এই গবেষনা পরবর্তী সময়ে মাদক নিরাময়ের নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে।

মাদকাসক্তির মূল কারণগুলো হলোঃ

  • মাদকের সহজলভ্যতাঃ তরুণ প্রজন্মের মাঝে মাদকের মতো ভয়ানক বিষ ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান একটি কারণ হলো এর সহজলভ্যতা। আমাদের দেশে প্রায় সকল প্রকার মাদক খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। সিগারেট, গাঁজা, হেরোইন, মদ, ফেন্সিডিলের মতো মাদকগুলো আমাদের চারপাশেই পাওয়া যায় এবং এগুলোর মূল্যও অনেকটা হাতের নাগালে। যার কারণে উপার্জন সক্ষম মানুষের পাশাপাশি বেকার, শিক্ষার্থীরাও এগুলোর প্রতি সহজেই আসক্ত হয়ে পড়ছে।
  • সঙ্গদোষঃ অনেক সময় মাদকাসক্ত বন্ধুদের কু-প্রভাবেও ভালো ব্যক্তি মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। বর্তমান সময়ে এই কারণ বিশাল আকারে মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠেছে। ভালো ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা অসৎ সঙ্গে পড়ে মাদক সেবনের প্রতি উদ্ভুদ্ধ হচ্ছে।
  • সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থাঃ সামাজিক ও পারিবারিক পরিবেশের কারণে বেশিরভাগ মানুষ মাদক সেবনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। পারিবারিক নিয়মের অভাবে এমনটা ঘটে। এর একটি বড় উদাহরণ হতে পারে বাংলাদেশের বস্তিগুলো। সেখানকার ৯০ শতাংশের অধিক কিশোর-কিশোরী, তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা মাদকাসক্ত। মাদকের প্রভাব কমাতে প্রতিটি পরিবারের লোককে নিজ দায়িত্বে সচেতন হতে হবে এবং তাদের সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
  • হতাশা ও দুশ্চিন্তাঃ তরুণদের মধ্যে এই কারণটা সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয়। অনেকে কোনো কাজে ব্যর্থ হয়ে, প্রিয়জনের সাথে বিচ্ছেদ, পারিবারিক অশান্তি ও কোলাহলের কারণে মাদক সেবন করে। তাদের ধারণা হতাশা ও দুশ্চিন্তা কাটিয়ে উঠতে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখে। কিন্তু তারা আসলে শেয়ালের ভয়ে বাঘের খাঁচায় আশ্রয় নেয়।
  • নিছক আনন্দ ও কৌতুহলঃ আমাদের দেশ সহ অনেক দেশের কিশোর কিশোরী ও অল্প বয়সী ছেলে-মেয়েদের মাঝে এই কারণটা বেশি পরিমানে দেখা যায়। তারা অনেক সময় কৌতুহলবসত মাদক গ্রহণ করে। নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রন করতে পারবে ভেদে অল্প অল্প করে মাদক নেয়। এভাবে আস্তে আস্তে তারা একপর্যায়ে বড় রকমের মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। যেটা পরে আর কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। আর হলেও তাতে অনেক বেগ পেতে হয়। আবার অনেকে নিজের স্মার্টনেশ দেখাতে মাদককে ব্যবহার করে। যা নিতান্তই বোকামি ছাড়া কিছু নয়।

আমাদের মনে রাখা উচিৎ যে, “একটা সমস্যাকে প্রতিকার করার চেয়ে সেটাকে প্রতিরোধ করায় উত্তম”। কোনো একটা সমস্যা থেকে বেঁচে থাকতে মাদক সেবন করা কখনোই সমাধান হতে পারে না। তাই কোনো অবস্থাতেই এই প্রাণঘাতি মাদককে প্রশ্রয় দেওয়া উচিৎ না।

পুরো পৃথিবীতে মাদক ছড়ানো

আফিম বানানো হয় পপি গাছের ফুল থেকে। একই সাথে ব্যাথা কমানো আর আনন্দময় অনভূতি তৈরী করতে এই আফিম ব্যবহর করা হয় খ্রীষ্টপূর্ব ৩০০০ সাল থেকে। উনিশ শতাব্দীতে এই আফিম থেকে আলাদা করা হয় “মরফিন”। পরে পরীক্ষাগারে বানানো হয় হিরোইন।

১৯৮০ ও ১৯৯০ এর দশকে ওষূধ কোম্পানিগুলো ব্যাথানাশক হিসাবে এই মরফিন জাতীয় দ্রব্যের ব্যাপক প্রচলন করে। নেশা সৃষ্টিকারী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াকে লুকিয়ে এর প্রচলন করা হয়। যার ফলে এই মাদকের কবলে পড়ে হাজার হাজার মানুষ।

মস্তিষ্কের কোষে এন্ডোরফিন নামক রাসায়নিক ব্যাথার অনুভূতি জাগায়। এই আফিম জাতীয় মাদক এন্ডোরফিনের রিসেপ্টরগুলোকে বন্ধ করে দেয়। সাথে মস্তিষ্ককে ডোপামিন আর এড্রেনালিন তৈরিতে সাহায্য করে। ফলে নিজের মধ্যে ভালো লাগা শুরু হয়।

সময়ের সাথে সাথে মস্তিষ্কের কোষে আফিম জাতীয় পদার্থের প্রতি টলারেনস বাড়ে। ফলে একই অনূভুতি পেতে অনেক বেশি মাদকের প্রয়োজন হয়। জন্মায় আসক্তি।

মাদকের ব্যবহার বন্ধ করতে গেলে পেশি ব্যাথা, বমি, জ্বর, উচ্চ রক্তচাপ, ডিপ্রেশন সহ বেশ কিছু সমস্যায় ভোগে রোগী। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বেশ বেগ পেত হয়।

শিশু ও মাদকাসক্তি

বর্তমানে আমাদের দেশে ছোট শিশুদের মধ্যেও মাদকাসক্তির প্রবনতা দেখা যাচ্ছে। এক জরিপে দেখা যায়, ৭-১১ বছর বয়সী ১০০০ জনের মধ্যে ২ জন মাদক সেবনকারী। তবে এ সময় খুব কম মাদক গ্রহন করায় এটি সাধারণত মাদক নির্ভশীলতার পর্যায়ে পৌছায় না। এ বয়সে শিশুর মাদক সেবনে প্রধানত দায়ী থাকে পরিবার আর সামাজিক পরিবেশ।

বেশিরভাগ বস্তিতে বাচ্চাদের মাদকাসক্তের সাথে বেড়ে উঠতে দেখা যায়। অনেক সময় নিজেরাও জড়িয়ে পড়ে মাদক চোরাচালান সহ নানারকম অপরাধমূলক কাজে। আর এভাবে মাদকাসক্ত হয়ে যায়।

এছাড়াও জিনগত প্রভাব থেকেও মাদকাসক্তি হতে পারে। গবেষকরা দেখিয়েছেন, ৪০-৬০ ভাগ ক্ষেত্রে এপিজেনেটিক্স আর পরিবেশগত প্রভাব একসাথে একজন ব্যক্তির মাদকাসক্তিতে কাজ করে।

বয়সের সাথে নেশার সম্পর্ক

বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মাদকাসক্তির ব্যাপকতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। সাধারণত ছোট অবস্থায় মাদক গ্রহনের স্বাধীনতা খুব একটা থাকে না, আবার পারিবারিক অনুশাসন কিছুটা বেশি থাকায়  ছোট শিশুদের মধ্যে মাদকের ব্যবহার কম দেখা যায়।

আবার মাদকাসক্তের গড় জীবনকাল স্বাভাবিক মানুষ থেকে কম হওয়ায় অনেকেই রোগ শোকে মারা যায় বার্ধ্যক্যে পৌছানোর আগেই। তাই মাদকসেবীদের মধ্যে বৃদ্ধের হার থাকে কিছুটা কম।

বর্তমানে বাংলাদেশে মাদকাসক্তের কেবল ৩৭ ভাগ শিশু আর বৃদ্ধ। আর ৬৩ ভাগই তরুণ ও কিশোর কিশোরী। ১৮ বছরের বেশি বয়ষ্ক ৩.৩ শতাংশ মানুষই মাদকসেবী। ১২-১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে ১.৫ শতাংশই মাদকাসক্ত।

মাদক গ্রহনে ক্ষতি

মাদকের কারণে স্বাস্থ্য খারাপ না হওয়া খুবই অস্বাভাবিক। মাদক সেবনে হতে পারে কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ, স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তপাত, ফুসফুসে ক্যান্সার, মুখে ক্যান্সার, এমনকি হতে পারে এইচআইভি পর্যন্ত। গর্ভকালীন মায়ের মাদক সেবনে জন্মের পর সন্তান NAS নামক জটিলতায় ভূগতে পারে।

কিছু কিছু মাদকের কারণে গর্ভাবস্থায় সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়। যার ফলে সন্তান অটিজমে ভূগতে পারে। দুগ্ধদানকালীন সময়ে কিছু কিছু মাদক দুধের সাথে সন্তানের দেহে প্রবেশ করতে পারে।

ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে নেওয়া হয় বেশ কিছু  মাদক। প্রতি ১০ জনে একজন এইডস রোগী ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে আক্রান্ত হন। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহনে বেড়ে যায় হেপাটাইটিস সি এর সংক্রমণও।

মাদক গ্রহন করেই গাড়ি চালানোর কারনে প্রতি বছর গাড়ি দূর্ঘটনা ঘটে অসংখ্য। মাদকের প্রভাবে আমাদের প্রতিক্রিয়া কাল বেড়ে যায়। সামনে গাড়ি আসলে তাকে এড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো একেবারেই উচিত নয় এবং এ কাজটি অবৈধ।

মাদকাসক্তি জনিত ক্ষতি

মাদকের ভয়াবহতা এতই বেশি যে, মাদক সেবীর আসে পাশে থাকা মানুষও মাদক সৃষ্ট অসুস্থতা থেকে বাঁচতে পারে না। অন্যের সেবন করা মাদকের ধোয়া যদি আপনি গ্রহন করেন, তখন তাকে বলা হয় পেসিভ স্মোকিং (Passive Smocking)। পেসিভ স্মোকিং এর ফলে শিশুদের ব্রঙ্কাইটিস, এজমা, এমনকি নিউমোনিয়াও পর্যন্ত হতে পারে।

প্যাসিভ স্মোকিং বেশিরভাগ সময়  সরাসরি ধূমপানের চেয়েও বেশি ক্ষতি করে। শিশু অবস্থায় পেসিভ স্মোকিং বেশি হলে বড় হয়ে তাদেরও ধূমপানের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মাদকসেবন

মাদকের বিস্তারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও বেশ  জোরালো ভূমিকা রাখে। মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহপাঠী আর আশেপাশের মানুষ দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মাদকের ব্যবহার বেশ স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০০ জন কিশোরের উপর চালানো এক পরীক্ষায় দেখা যায় যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সক্রিয়, তাদের সিগারেট কেনার প্রবনতা বেড়ে যায় ৫ গুণ। মদ্যপানে আসক্তির সম্ভাবনা বাড়ে ৩ গুণ। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে মাদকের প্রচারণা মাদকের ব্যবহার বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।

মাদকাসক্তের চিকিৎসা

বৈজ্ঞানিক গবেষনার মাধ্যমে প্রাপ্ত বেশ কিছু পদ্ধতি মাদক মুক্ত জীবন যাপনে সাহায্য করতে পারে। তবে অন্যান্য জীবানু ঘটিত রোগের মত মাদকের কারণে সৃষ্ট ডিসওর্ডার নিরাময় করা যায় না। একটু অসতর্ক হলেই আবার রোগী মাদকাসক্ত হয়ে যেতে পারে। সাধারণত ডাক্তারের পরামর্শ মেনে না চললে আবার মাদকাসক্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মাদকের চিকিৎসা মূলত ২ ধাপে হয়।

১। প্রথমবার মাদক ছাড়ার পর রোগীর শারীরিক মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটে। রোগী প্রায় সময় ডিপ্রেশনে চলে যায়, ঘুমাতে না পারা, উচ্চ রক্ত চাপ, দুঃশ্চিন্তা করা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। চিকিৎসক প্রথমে এসব উপসর্গের চিকিৎসা করেন। রোগী বারবার মাদক গ্রহনে বাধ্য হলে সাইকোথেরাপি বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

২। বার বার মাদকের কাছে ফিরে যাওয়া রোগীদের জন্য বিশেষ থেরাপির ব্যবস্থা করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ঔষধের সাহায্য নেওয়া হয়। আফিমজাতীয় মাদক বা অফিওয়েড থেকে মুক্তির জন্য মেথাডোন, বিউপ্রেনরপাইন, নাল্ট্রেক্সোন, লোফেক্সিডিন , তামাক জাতীয় মাদক বা নিকোটিনের প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য বিউপ্রপিওন, ভারেনিক্লিন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা হয়।

মাদকের ব্যবহার এখনই না কমালে ভবিষ্যত প্রজন্ম ভয়াবহ হুমকির মধ্যে পড়বে। বর্তমানে বাংলাদেশে ২৫ লক্ষের বেশি মানুষ নিয়মিত মাদক সেবনের সাথে জড়িত। মাদকের ঝুকির মধ্যে আছে এর দ্বিগুনের চেয়েও বেশি মানুষ। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দেওয়া এক তথ্যমতে ২০১৯ সালে প্রতিদিন ১১৪ জন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছিল। যে সংখ্যা ২০১৭ সালে ছিল মাত্র ৬৯।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং মায়ানমার থেকে ইয়াবা চোরাচালান বাড়ার কারণে এ সংখ্যা দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। দেশের বাজারে ইয়াবার একটি পিল ৩৫০ টাকার বেশি হলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে পাওয়া যায় ৫০ টাকায়। পুরো ২০১৮ সালে মাত্র ৯১ জন মহিলা সরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নেন। এই সংখ্যা ২০১৯ এর নভেম্বর পর্যন্ত হয় ৩৬০, যা প্রায় ৪ গুণ।

বাংলাদেশ মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য ৪ই মে ২০১৮ সালে যুদ্ধ ঘোষনা করে। এর আগে ফিলিপাইনও এমন যুদ্ধ ঘোষনা করেছিল। তবে সুইজারল্যান্ড আর পর্তুগালের মত দেশ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে, মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ মাদকের ব্যবহার কমাতে খুব একটা কার্যকরী নয়।

মাদকাসক্তির এই আগ্রাসী থাবা নিয়ন্ত্রনের জন্য বাংলাদেশে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তা যথেষ্ট নয়। ২৩ টি জেলায় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র তৈরীই হয়নি। এছাড়াও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাদকাসক্তকে সাহায্য করার বদলে রোগীকে শিকল দিয়ে বেধে নির্যাতনের ঘটনাও সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে এসব মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে।

BOOK APPOINMENT