|

Effects of electronic devices on children's mental development

শিশুর মানসিক বিকাশে ইলেকট্রনিক ডিভাইস এর প্রভাব ও করণীয়

 

বর্তমান সময়ে শিশুর সাথে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সম্পৃক্ততা খুব বেশি। অনেক ক্ষেত্রে তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। শিশুর বিকাশের জন্য প্রয়োজন সঠিক শিক্ষা, পরিবেশ এবং পরিচর্যা।

শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো ইতিবাচক থেকে নেতিবাচক প্রভাবই বেশি ফেলে। যা ধীরে ধীরে অনেক বড় ধরনের সমস্যায় রূপ লাভ করে।

শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আজকের শিশুরা ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির রক্ষণাবেক্ষণ করবে, তারাই তাদের বিবেক-বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে দেশ ও জাতিকে পথ দেখাবে। সে জন্য শিশুদের সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।

শিশুর সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করতে পারলে, তাদের সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলে, তাদের সঠিক মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটবে এবং তারা ভবিষ্যতে সঠিক পথ প্রদর্শক হবে।

শিশুরা কাদামাটির মত। তাদেরকে যেভাবে গড়া হবে, তারা সে ভাবে গড়ে উঠবে। তাদেরকে সঠিক পথ দেখালে তারা সঠিক পথে চলবে। তাই শিশুদের ক্ষেত্রে একটু বেশিই সচেতন হতে হবে। যেকোনো পদক্ষেপ যাচাই বাছাই করে নিতে হবে।

তারা যেন কোন ভুল পথে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সব সময় সচেতন থাকতে হবে। কোনভাবেই শিশুদের ক্ষেত্রে কোন কিছুকে ছাড় দেয়া যাবে না। তাদের বিকাশে সর্বাত্তক সচেতন থাকতে হবে।

যুগের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার হচ্ছে প্রযুক্তি। প্রযুক্তির মাধ্যমে যুগ অনেকটাই পরিবর্তিত হচ্ছে। নতুন প্রযুক্তি নতুনভাবে মানুষকে চালিয়ে নিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রযুক্তি আজ শিশুদের ব্যবহারেও আসছে।

শিশুদের অনেক কাজকর্ম প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। তবে এটি মোটেও কোন ভাল দিক নয়। প্রযুক্তি মানুষের আবিষ্কার। তাই মানুষের উচিত প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা, প্রযুক্তি দ্বারা মানুষ নিয়ন্ত্রিত হোক এটা কখনোই কাম্য নয়।

প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের প্রসূতি

বর্তমান যুব সমাজ থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-শিশু প্রত্যেকেই প্রযুক্তির কবলে। প্রয়োজন ছাড়াও অতিরিক্ত পরিমাণে প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের যুব সমাজ।

এখন সেই প্রযুক্তির ব্যবহার যুবসমাজ ছাড়িয়ে অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যদের মধ্যে প্রতীয়মান হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বাবা-মা ঘরের কাজের ক্ষেত্রেও প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে।

এবং ছোট্ট শিশুর কান্না সামলাতে না পেরে তাদের হাতে প্রযুক্তিকে তুলে দেন। শিশুকে খাওয়াতে গেলে কিংবা ঘুম পাড়াতে গেলেও শিশুর হাতে প্রযুক্তি বা মোবাইল ফোন তুলে দেন। এমন ব্যপার আজ হরহামেশাই দেখা যায়।

বিনোদনের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার সঠিক হলেও, শিশুর দৈনন্দিন কাজকর্ম করাতে যদি প্রযুক্তি প্রয়োজন হয় তবে তা একদমই সঠিক নয়। কারণ সে ক্ষেত্রে শিশুটি শুধুমাত্র অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে। তার মানসিক বিকাশ, শারীরিক বিকাশ এবং বুদ্ধি বিকাশ একেবারেই হচ্ছে না।

শিশুর বিকাশের জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিচর্যা। শিশুর বিকাশের জন্য শিশুকে খেলাধুলা করাতে নিতে হবে। শিশুকে শারীরিক কসরত করাতে হবে। বুদ্ধি বৃদ্ধিক কাজ করাতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বিভিন্ন নিউট্রিশনিস্ট দের মতে শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ১-৫ বছর বয়সেই হয়ে থাকে।

তাই এই সময় শিশুদের প্রয়োজন সঠিক পরিচর্যা এবং সঠিক দিকনির্দেশনা। তাদেরকে কখনোই আসক্তি বাড়ে এমন কাজের দিকে ঠেলে দেওয়া যাবে না। এমনকি যে কাজগুলো করলে তাদের বুদ্ধি বিকাশের স্থবিরতা আনে, সে কাজগুলো থেকে বিরত রাখতে হবে।

শিশুর জন্য তার পরিবেশ একটি খোলা পাঠশালা। সে প্রতিদিন যা কাজ করবে, যা দেখবে তার থেকে শিক্ষা লাভ করবে। সে যে যে সমস্যায় পড়বে সে সমস্যা সমাধানের রাস্তা থেকে শিক্ষা লাভ করবে। তার প্রত্যেকটা কাজ কর্মের উপর তার বিকাশ নির্ভর করে।

শিশুদেরকে কখনোই কোন কাজের জন্য চাপ দেয়া যাবে না। তাদের কোনো কিছুর জন্য জোর করা যাবে না। এতে তাদের মন-মানসিকতা সংকীর্ণতা পেতে পারে। তাদের অবশ্যই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জিং এবং উদ্ভাবনী জিনিসের দিকে এগিয়ে দিতে হবে।

তাদের ঘরের কোণে প্রযুক্তিনির্ভর মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, টিভি এসবের মাধ্যমে বিনোদনের ব্যবস্থা করা যাবে না। খেলার মাঠে দৌড়াদৌড়ি, শারীরিক কসরত এর মাধ্যমে বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই শিশুর সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

মাঠে দৌড়াদৌড়ি, শারীরিক কসরত কিংবা খেলাধুলার কথা উঠলেই প্রত্যেকটি অভিভাবকের একটি মাত্র কথা, আর তা হল বর্তমানে শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে খেলার মাঠ নেই। অবশ্য এই সমস্যাটি শিশুর বিকাশের অন্তরায়।

শিশুর বিকাশের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ মাঠ এবং শিক্ষণীয় পরিবেশ। জন্মের পর থেকে শিশু পরিবারের কাছে বড় হয়। পরিবার থেকেই প্রাথমিক শিক্ষাটি পেয়ে থাকে। পরবর্তী সময়ে স্কুলের মাধ্যমে শিশুর বিকাশ হয়ে থাকে। তাই শিশুর সঠিক বিকাশের দায়িত্ব বাবা-মার’ই।

ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহারে শিশুদের রোগ

প্রযুক্তি ব্যবহারে একটি শিশুর বিকাশই বাধাগ্রস্ত হয় না, বরঞ্চ শিশু বিভিন্ন রকম রোগেও আক্রান্ত হয় বটে। যেমনঃ

১. ঘুমের সমস্যাঃ

একটি শিশুর দিনে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি শিশুকাল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হয়, তবে তা পরবর্তী জীবনে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা কারণ হয়ে উঠতে পারে।

শিশুকাল থেকেই শিশুর পর্যাপ্ত ঘুমের ব্যবস্থা করতে হবে আর সেই জন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে।

২. শিশুর মানসিক সমস্যাঃ

মোবাইল কিংবা কম্পিউটার, ল্যাপটপ ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে শিশুরা খুব তাড়াতাড়ি আসক্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলো অনেক বেশি উত্তেজনা সৃষ্টি করে।

মেজাজ খিটখিটে হওয়া, রাগ হওয়া কিংবা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া, এরকম সমস্যা হরহামেশাই দেখা যায়। এরকম সমস্যা শিশুদের মানসিক পরিবর্তনে অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। তাৎক্ষণিক মানসিক পরিবর্তনের ফলে শিশু নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না এবং অনিয়ন্ত্রিত মানসিক অবস্থা বিকাশ লাভ করতে থাকে।

যা পরবর্তী সময়ে শিশুর মধ্যে হতাশা, বিষন্নতার মতো বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে। এমনকি বিভিন্ন কাজে মনোযোগ দিতে পারেনা, মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতা লোপ পেতে থাকে।

দুই ঘণ্টার বেশি মোবাইল ফোন কিংবা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে থাকলে শিশুদের মধ্যে এরকম সমস্যা আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন নতুন সমস্যার উদ্ভব ঘটে।

৩. শারীরিক সমস্যাঃ

অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শিশুদের মধ্যে শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। যেমনঃ  অলস প্রবণতা, স্থূলতা, মেদ বৃদ্ধি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতা।

৪. চোখের সমস্যাঃ

আমরা কমবেশি এ বিষয় সম্পর্কে জানি। ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে যে ইউভি রশ্মি নির্গত হয় তা চোখের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং শিশুদের চোখের জন্য এটি অনেক বেশি ক্ষতিকর। শিশুদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে শুরু করে সবকিছুই অনেক বেশি দুর্বল।

এমন সময় ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে নির্গত রশ্মি  চোখের প্রয়োজনীয় পানি শুকিয়ে দেয়, যার কারণে প্রতি সেকেন্ডে শিশুর যে কত চোখের পলক ফেলার পরিমান বাড়তে থাকে এবং নানা রকম জটিল সমস্যা দেখা দেয়।

সবথেকে বড় সমস্যাটি হল ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রতি আসক্তি। একটি শিশুর কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না যে, সে কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস এর প্রতি আসক্ত হবে। শুধুমাত্র ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রতিই নয় বরং যে কোন জিনিসের প্রতি শিশুর আসক্তি কাম্য নয়।

শিশু সবে মাত্র শিখছে। তার মধ্যে ভালো-খারাপ, ইতিবাচক-নেতিবাচক কোন প্রকার অনুভূতি নেই। এর মধ্যে যদি আসক্তি চলে আসে তবে সে নতুন জিনিষের প্রতি মনোযোগ হারাবে। এতে তার সঠিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। তাই শিশুদের জন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে রাখাই শ্রেয়।

উপরের সমস্যা গুলো ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।

ইলেকট্রনিক ডিভাইস এর আসক্তি কমাতে করণীয়

মায়েরা খাবার খাওয়ানোর জন্য শিশুদের হাতে অনেক সময় ইলেকট্রনিক ডিভাইস দিয়ে থাকে। যার ফলে শিশুদের মধ্যে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে তাদের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ছাড়া খাওয়ানো সম্ভব হয় না।

এমনকি মোবাইল নিতে চাইলে তাদের মধ্যে রাগান্বিত কিংবা জোরালো অনুভূতির সৃষ্টি হয়। যাকে উইথড্রল সিম্পটমস বলে। তাদের মধ্যে অলসতা বৃদ্ধি পায় এবং কাজ করার ইচ্ছা কমে যায়।

দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল ব্যবহারের ফলে তাদের মোবাইলের প্রতি অনেক বেশি আসক্ততা সৃষ্টি হয়। পরিবারের থেকে পাওয়ার ছোট ছোট আনন্দ উপভোগের ক্ষমতা অর্থাৎ সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা কমে যায়।

এরূপ অবস্থায় পরিবারকে প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমনঃ

  • দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন না দেওয়া।
  • তাদের ঘুমানোর জন্য মোবাইল ফোন কিংবা কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস এর উপরে নির্ভর না করা।
  • তাদের আনন্দ উপভোগের বিষয় হিসেবে মোবাইল, টেলিভিশন, টেলিফোন, ভিডিও গেম, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ব্যবহার না করা।
  • তাদেরকে মাঠ পর্যায়ে খেলাধুলার ব্যবস্থা করে দেওয়া।
  • অন্যান্য শিশুদের সাথে খেলাধুলা ব্যবস্থা করে দেওয়া।
  • নতুন নতুন উদ্ভাবনী বিষয়ের প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়ে তোলার সুযোগ বৃদ্ধি করা

ইত্যাদির মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে অনেক বেশি পরিবর্তন সম্ভব এবং শিশুদের মধ্যে ইতিবাচক বিকাশ ও নিয়ে আসা সম্ভব। এভাবেও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধংস হওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে।

ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো একবিংশ শতাব্দীর আশীর্বাদ হয়ে এসেছে মানুষের যোগাযোগ, শিক্ষা এবং গবেষণার কাজে জন্যে।কিন্তু অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার শিশুদের সামাজিক দক্ষতা ও মনস্তাত্ত্বিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে।

এর ফলে শিশুদের মুখোমুখি যোগাযোগ ও হাতের কাজের প্রতিও অনীহা তৈরি হয়। ডিভাইস শিশুদের শিক্ষার কাজে প্রয়োজন হতে পারে কিন্তু সেটা প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয়। কাজেই এসব ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের সচেতন থাকা খুবই জরুরি।

আপনার শিশু সন্তান যদি ইলেকট্রনিক ডিভাইসের আসক্ত হয়, উপরের আজই পদক্ষেপগুলো গ্রহন করুন। এমনও হতে পারে যে, আপনার সন্তান অনেক বেশি ইলেকট্রনিক ডিভাইসের আসক্ত উপরের পদক্ষেপগুলো কাজে আসছে না, তখন অবশ্যই ভালো কোন মানসিক ডাক্তার দেখান অথবা ভালো মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যান। আমরা মনে করি তার কাউন্সলিং প্রয়োজন।

কাউন্সলিং এর জন্য আপনি বেছে নিতে পারেন “নিরাময় হাসপাতাল” কে কারন এদের রয়েছে অভিজ্ঞ পেশাদারের টিম।

 

Recent Post:

Are you looking for Rehab center In Dhaka Bangladesh?

 

BOOK APPOINMENT